মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মৃত্যুকে ভয় নয় স্মরণ রাখা

মো. সিয়াম হোসাইন:

মানুষ অগোছালো কোনো কিছুই পছন্দ করে না। কারণ এটা মানুষের স্বভাব বহির্ভূত। মৃত্যু পরবর্তী জীবনটা যেহেতু বেশ অগোছালো তাই সুরম্য ও সুবিস্তর গোছালো পৃথিবী রেখে মানুষ কিছুতেই মৃত্যু পরবর্তী জীবনে পাড়ি জমাতে চায় না। কিন্তু মহান আল্লাহ মানুষের হায়াতের খাতায় মৃত্যুকে অপরিহার্য বাস্তবতা হিসেবে লিখে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রত্যেক আত্মাই মরণের স্বাদ আস্বাদন করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।’ সুরা আনকাবুত : ৫৭

মৃত্যু যথাসময়ে : মানুষের মৃত্যুপরবর্তী জীবনই আসল জীবন এ পার্থিব জীবন শুধু ক্ষণিকের জন্য। অথচ এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের পেছনে গোটা জিন্দেগি ব্যয় করি। ভুলে যাই, এই জগৎ সংসার, দুনিয়ার দৌড়ঝাঁপ এবং কর্মময় জীবনের ব্যস্ততা সবকিছুই স্বস্থানে থাকবে, থাকবো না শুধু আমরা। যেখানেই থাকি না কেন মৃত্যু আমাদের গ্রাস করবেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরে অবস্থান করো তবুও।’ সুরা আন নিসা : ৭৮

মৃত্যু অতি নিকটে : মৃত্যু মানবজীবনের সুনিশ্চিত অধ্যায় হলেও মৃত্যুর সময় অনিশ্চিত। যেকোনো সময় মৃত্যু এসে মানুষের জীবনের সমস্ত সুখ ও সাধনা এবং সার্বিক ব্যস্ততা নষ্ট করে দিতে পারে। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, ‘যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন সকালের জন্য অপেক্ষা করো না, আর যখন তোমার সকাল হয় তখন সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করো না। অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও আর তোমার মৃত্যুর জন্য জীবিতাবস্থায় পাথেয় জোগাড় করে নাও।’ সহিহ্ বোখারি : ৬৪১৬

মৃত্যুর সৃষ্টির কারণ : মানবকুলের জন্ম ও মৃত্যুর অব্যাহত ধারা মহান আল্লাহর সৃষ্টিগত এক ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের পেছনে আল্লাহর নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে শুদ্ধ করে সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।’ সুরা আশ শামস : ৮-১০

মানবজাতি সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর যেমন রয়েছে মহান উদ্দেশ্য, তেমনি মানবজাতির মৃত্যুদানের পেছনেও রয়েছে এক উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ পার্থিব জগতে কারা কর্মে সৎ ও সুন্দর হয় এবং কারা কর্মে দুষ্ট ও অসুন্দর হয় তা পর্যবেক্ষণ করা। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।’ সুরা মূলক : ২

মৃত্যুর প্রস্তুতি : জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালই জীবন। তাই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মুমিন মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা পাঁচ জিনিসকে পাঁচ জিনিসের আগে গনিমত (সম্পদ) মনে করো: ১. যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, ২. সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, ৩. সচ্ছলতাকে অভাবের আগে, ৪. অবসরকে ব্যস্ততার আগে, ৫. জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।’ মুস্তাদরাকে হাকিম : ৭৮৪৬

মৃত্যুর স্মরণ : ইসলাম মৃত্যুকে ভয় না করে, মৃত্যুর স্মরণ ও পরবর্তী জীবনের পরিণতি চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সেসব মানুষের নিন্দা করেছে যারা মনে করে মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বললেন, ‘তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।’ ইবনে মাজাহ : ৪২৫৯

মৃত্যুকে স্মরণের উপকারিতা : মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করলে ইবাদত-বন্দেগিতে একনিষ্ঠতা বাড়ে। মনের অস্থিরতা দূর হয় এবং স্থিরতা জন্ম নেয়। মৃত্যুকে স্মরণ করার ফলে মানুষের লোভ-লালসা কমে যায়। অস্থায়ী দুনিয়ার ভোগ সামগ্রী থেকে মনের দূরত্ব তৈরি হয়। ধোঁকা, প্রতারণা, জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার, মিথ্যা, ধূর্তামি ইত্যাদি থেকে মানুষ দূরে থাকতে পারে। যে ব্যক্তি আপন মৃত্যুকে উপস্থিত মনে করবে সে সর্বাধিক পরিমাণে নেক আমল করতে আগ্রহী হবে। এ জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বেশি করে স্বাদ বিনষ্টকারী বস্তুটির কথা তথা মৃত্যুকে স্মরণ করো।’ সুনানে তিরমিজি : ২৩০৭

সুন্দর মৃত্যু : দুনিয়ার ভোগবিলাসের জীবনকে রেখে মৃত্যু পথের পথিক হওয়া অনেক কষ্টকর। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে সব প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে মুমিন ব্যক্তি সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে উত্তম ও সুন্দর মৃত্যু কামনা করবেন। তাই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ, থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ থেকে এবং অতি বার্ধক্য থেকে। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শয়তানের প্রভাব থেকে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মৃত্যুবরণ থেকে।’ সুনানে আবু

দাউদ : ১৫৫২

মৃত্যু পরবর্তী-জীবনের ফায়সালা : যে জন্ম নিয়ে দুনিয়াতে এসেছে সে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। তবে এই মৃত্যু কারও জন্য নিয়ে আসবে অনাবিল সুখ আবার কারও জন্য অতীব দুর্ভোগ। মৃত্যুর পরের দুনিয়া কারও জন্য হবে শান্তির ঠিকানা সুশোভিত পুষ্পোদ্যান জান্নাত আবার কারও জন্য হবে ভয়ংকর অগ্নিকুণ্ড জাহান্নাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুত্তাকিদের যে জান্নাতের ওয়াদা দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝরনাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝরনাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদের ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?’ সুরা মুহাম্মদ : ১৫

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION